ঢাকা, লোড হচ্ছে...
সংবাদ শিরোনাম
দাম বাড়লো জ্বালানি তেলের, সোমবার থেকে কার্যকর পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জনমনে আস্থা ফেরাতে হবে উপজেলার সিএ পদে চাকরি করে তিন মাসেই কোটিপতি ঘাটাইলে বংশাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে যুবকের মৃত্যু গাজীপুরে নতুন পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় খালেদা জিয়া ভারতীয় আধিপত্যবাধের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক: রাশেদ খাঁন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আ. লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল ১২২ বার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য দায়ী পতিত স্বৈরাচার সরকার: আবু হানিফ

নড়াইলে বিদেশ ফেরত প্রতিবেশীর খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত জাফর শেখ

#

মতিন গাজী (যশোর)

০১ অক্টোবর, ২০২৫,  2:57 PM

news image

সুদে টাকা ও সহায় সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে সুন্দর জীবন যাপনের আশা ছিল পরিবারের। কিন্তু সেই আশা আজ বালির বাঁধের মত ভেঙ্গে একটি পরিবারকে করেছে সর্বশান্ত। ছেলের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে দিশেহারা পারভীন বেগম। 

বলছিলাম নড়াইল সদর থানার বিছালী গ্রামের জাফর শেখের ছেলে শিমুলের কথা। গত ২৮ সেপ্টেম্বর (রবিবার)  সরেজমিনে গেলে জানা যায়, চলতি বছরের মে মাসের ২৪ তারিখে শিমুলের প্রতিবেশী মো. খোরশেদ মোল্লার ছেলে প্রবাস ফেরত মো. খাইরুল ইসলাম ও মো. শরিফুল ইসলাম এর খপ্পরে পড়ে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে (সৌদিআরব)  পাড়ি জমায় শিমুল। এর আগে ঘেরের জমি বন্ধক রেখে নিজের মোটরসাইকেল বিক্রি করে সুদে টাকা নিয়ে ৫ লক্ষ টাকা তুলে দেয় খাইরুল গংদের হাতে। সরকারি ষ্ট্যাম্পে চুক্তি হয় আকামা করে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে ১৮০০ সৌদি রিয়ালের বেতনে কাজ ধরিয়ে দেবে। অন্যথায় ক্ষতিপূরণসহ সমস্ত টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু কোন আকামা না দেওয়ায় পুলিশের ভয়ে মরুভূমিতে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে শিমুল।

মোবাইলের ভিডিও কলে শিমুলের এমন অবস্থা দেখে তার বাবা জাফর শেখ,  মা পারভীন বেগম ও স্ত্রী রানী বেগমে ঘুম হয়েছে হারাম। এ বিষয়ে খাইরুল ও শরিফুলের সাথে বার বার কথা বলেও কোন লাভ হয়নি। অতঃপর গ্রাম্য শালিশও হয়েছে একাধিকবার।  চুক্তি ভঙ্গ করে এখন খাইরুল গং আরো টাকা চায়। কিন্তু জাফর শেখের দেওয়ার আর কিছু নেই। দুই মাস তার পরিবার শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছেন বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে জানান জাফর শেখ। ছেলের কষ্টের গল্পে তার পরিবারের হাসি মিলিয়ে গেছে বিষাদে।  শিমুল ভিডিও কলে তার মা-বাবা ও স্ত্রীকে জানায়, প্রতিনিয়ত পুলিশের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। খাওয়া ঘুম তার নেই। সে খুব ভয়ে আছে। কোন উপায়ান্ত না পেয়ে শিমুলের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে প্রতারক খাইরুল ও শরিফুলকে আসামী করে নড়াইল বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচার ও প্রতিরোধ ট্রাইবুনালে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার বিবরণী সূত্রে জানা গেছে, আসামীগণ সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারী, মানবপাচার অপরাধ সংগঠনে প্ররোচনাকারী, অবৈধভাবে আটক ও মুক্তিপন আদায়কারী এবং প্রতারক চক্র। ওই চক্র প্রত্যন্ত অঞ্চলের সরল সোজা লোকদের বিদেশে চাকুরী ও ভিসা দেওয়ার প্রলোভন দিয়ে মানব পাচার করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন। ভুক্তভোগী শিমুল শেখকে সৌদি আরব পাঠিয়ে ড্রাইভার পদে চাকুরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মানব চক্রের ওই দুই সদস্য ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করে শিমুলকে চলতি বছরের ২৪ মে সৌদি আরব পাঠায়। শিমুল সৌদিআরবের রিয়াদ বিমান বন্দরে  পৌঁছানোর পর আসামী পক্ষের লোক রাজন নামে এক ব্যক্তি তাকে (শিমুল) রিসিভ করে একটি ঘরে নিয়ে যায়। সেখানে শিমুল অর্ধাহার-অনাহারে থাকার পর কাজ প্রদানের কথা বললে শিমুলের উপর অমানুসিকভাবে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। শিমুল গত ৭ জুলাই ঘটনাটি তার মা পারভীনকে জানায়। রাজন সৌদি আরব থেকে মোবাইলে বাদির মাকে বলে ছেলেকে বাঁচাতে হলে খায়রুল ও শরিফুলের কাছে আরও ৩ লাখ টাকা দিতে হবে। পরবর্তীতে মামলার বাদী পারভীন অভিযুক্ত খায়রুল ও তার ভাই শরিফুলের কাছে গিয়ে ছেলেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার কথা বললে তারা মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। এক পর্যায়ে বাদীকে গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়।

পরবর্তীতে ঘটনা উল্লেখ করে আদালতে মামলা দায়েরের পর মামলাটি  বিজ্ঞ আদালত আগামী ২২ অক্টোবর পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দিয়েছেন। সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে অপরাধীরা আইনের আওতায় আসুক এটাই ভুক্তভোগী পরিবারের প্রত্যাশা। শিমুলের চাচা মাসুদ শেখ ও চাচি খাদিজা জানায়, এ ঘটনায় কয়েকবার গ্রাম্য শালিস ও থানায় অভিযোগ দিলেও তারা মানেনি। অতঃপর মামলা করায় প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তারা। তারা এমনও বলছে, প্রয়োজনে জাফর শেখ কে হত্যা করে গুম করবো। প্রতিনিয়ত হুমকির মধ্যে দিয়ে জাফর শেখের পরিবার মানবেতর জীবনজাপন করছে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত শরিফুলের সাথে কথা হলে আনিত অভিযোগ সঠিক নয় বলে জানান। চুক্তি অনুযায়ী তাকে কাজ দিয়েছে এবং আকামার ম্যাসেজ ও শিমুলের ফোনে আসছে। কিন্তু ওই কাজে তার কষ্ট হয় তাই ওখান থেকে পালিয়ে গেছে বলে জানান। তবে এ বিষয়ে কোন প্রমান তারা দেখাতে পারেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর পিবিআইয়ের এসআই  মহিদুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত চলছে, এখনি কিছু বলা যাচ্ছে না। তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে বিস্তারিত বলা যাবে।