রাহাত শরীফ (গোপালপুর)
২৮ অক্টোবর, ২০২৫, 3:22 PM
গোপালপুরে শীতের আমেজ
টাঙ্গাইলের গোপালপুরে এখন চারপাশে শীতের মিষ্টি আমেজ। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বাতাসে এক ধরনের শীতল পরশ, শিশিরে ভেজা ঘাসে হাঁটলেই বোঝা যায় — শীত এসেছে দোরগোড়ায়। যদিও ক্যালেন্ডারে এখনও হেমন্তের শেষভাগ, তবুও প্রকৃতি যেন আগেভাগেই শীতের আগমন বার্তা শোনাতে শুরু করেছে।
ভোরের দিকে কুয়াশায় ঢাকা চারপাশে এক অপার সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়। মাঠে দাঁড়ালে মনে হয়, যেন মেঘ নেমে এসেছে মাটির কাছাকাছি। সূর্যের প্রথম আলো যখন কুয়াশা ভেদ করে মুখ দেখায়, তখন গোপালপুরের প্রকৃতি যেন নতুন করে জেগে ওঠে। গাছে গাছে শিশিরবিন্দুতে ঝিলমিল করে সূর্যের আলো, আর গ্রামের মানুষরা জেগে ওঠেন দিনের কাজ নিয়ে।
চা দোকানগুলোতে এখন সকাল থেকেই জমে ওঠে আড্ডা। ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে উষ্ণতা খুঁজে নেয়া মানুষের মুখে মুখে শীতের গল্প। কেউ বলে, “এই ঠান্ডায় সকালে চা না খেলে মনই ভালো লাগে না,” আবার কেউ হাসতে হাসতে বলে, “শীত আসলে চায়ের স্বাদই অন্যরকম।” দোকানিরাও যেন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চা, পিঠা আর ভাপা খাবার বিক্রি করে।
গোপালপুরের কৃষকেরা এখন রবি মৌসুমের ফসলের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ আলু রোপণ করছেন, কেউ আবার সরিষা ক্ষেতে সার দিচ্ছেন। সকালে কুয়াশা সরার পর থেকেই জমিতে দেখা মেলে চাষির ব্যস্ততা। অনেকেই বলছেন, এই সময়ের ঠান্ডা আবহাওয়া ফসলের জন্য উপকারী। তাই কৃষকের মুখে এখন হাসির ঝিলিক।
স্কুলগামী শিশুরা সকালে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম থেকে উঠতে একটু গড়িমসি করলেও, কুয়াশার ভেতর দৌড়ঝাঁপ করে স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের মুখে থাকে এক ধরনের উচ্ছ্বাস। গ্রামের বয়স্করা বাড়ির উঠানে বসে রোদ পোহান, কেউবা আগুন জ্বেলে গল্প করেন। শীতের এমন সকাল যেন সবাইকে কাছাকাছি নিয়ে আসে।
গোপালপুরের স্থানীয় বাজারগুলোতেও শীতের ছোঁয়া লেগেছে। বাজারে উঠেছে নতুন আলু, শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি—সবজির দামে তুলনামূলক স্বস্তি দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি, গ্রামীণ নারীরা পিঠা তৈরি শুরু করেছেন। চুলার পাশে বসে চিতই, পাটিসাপটা আর ভাপা পিঠা বানানোর আনন্দে ঘর-বাড়ি ভরে উঠছে উৎসবের আমেজে।
সব মিলিয়ে গোপালপুরে এখন শীতের এক মায়াময় পরিবেশ। ঠান্ডা হাওয়া, শিশিরভেজা সকাল, পিঠার ঘ্রাণ আর রোদে গা এলিয়ে দেওয়া দুপুর—সবকিছু মিলিয়ে প্রকৃতি যেন নতুন করে সাজিয়েছে নিজেকে।
এমন সময়ই গোপালপুরবাসী বলছেন—“এই সময়টাই সবচেয়ে সুন্দর। না বেশি গরম, না বেশি ঠান্ডা—সব কিছুই মিষ্টি ভারসাম্যে।”