বিপ্লব চৌধুরী (বিশেষ প্রতিনিধি)
০৬ নভেম্বর, ২০২৫, 9:23 PM
৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির ইতিহাসে অনন্ত প্রেরণা
বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে ৭ই নভেম্বর এক বিশেষ দিন—একটি দিন যা রাজনৈতিক পরিবর্তন, জাতির চেতনার পুনর্জাগরণ এবং রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনার প্রতীক হয়ে আছে।
“জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস” নামে পরিচিত এই দিনটি কেবল একটি রাজনৈতিক ঘটনার স্মারক নয়, বরং এটি জাতির গণতান্ত্রিক চেতনা, দেশপ্রেম, ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ রক্ষার এক বাস্তব প্রয়াসের প্রতিফলন।
১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর—এক অস্থির সময়। দেশ তখন রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ষড়যন্ত্র, ও নেতৃত্ব সংকটে জর্জরিত। ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী ও রাজনীতির অভ্যন্তরে তীব্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। দেশের রাজপথে ও ব্যারাকে ক্রমে জমতে থাকে অসন্তোষ। এমন পরিস্থিতিতে সৈনিক ও সাধারণ মানুষের মিলিত এক অভ্যুত্থান ঘটায় ৭ই নভেম্বরের “বিপ্লব”।
এই দিনে সৈনিক ও জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন কর্নেল জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করেন এবং রাষ্ট্রের নেতৃত্বের দায়িত্ব তাঁর হাতে ন্যস্ত হয়। দেশবাসী বিশ্বাস করেছিল—এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই জাতি মুক্তি পাবে অস্থিরতা, ষড়যন্ত্র ও বিদেশি প্রভাবের করাল ছায়া থেকে। সেই থেকেই ৭ই নভেম্বরকে বলা হয় “জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস”।
৭ই নভেম্বর কেবল সামরিক বা রাজনৈতিক ঘটনা নয়—এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মোড়, যেখানে সেনা সদস্য, সাধারণ মানুষ, এবং মুক্তিযোদ্ধারা মিলেমিশে দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, ও জাতীয় ঐক্য রক্ষায় একত্রিত হয়েছিলেন। সেই সংহতির মধ্যে ফুটে উঠেছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা—“দেশ আগে, দল পরে”।
জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে পরবর্তী সময়ে যে গণতান্ত্রিক ধারা, বহুদলীয় রাজনীতি ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়, তার বীজ বপন হয়েছিল এই দিনেই।
৭ই নভেম্বরকে ঘিরে দেশে রাজনৈতিক বিতর্কও কম নয়। কারও কাছে এটি “জাতীয় বিপ্লবের দিন”, আবার কারও কাছে এটি “সেনা বিদ্রোহ”। কিন্তু ইতিহাসের মূল্যায়নে দেখা যায়, এই দিনের ঘটনাপ্রবাহ বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক রূপান্তরের দিকে ধাবিত করেছিল—যা পরবর্তী দশকে জাতীয় উন্নয়ন ও বহুদলীয় রাজনীতির ভিত্তি স্থাপন করে। ইতিহাসের ঘটনাকে দলীয় চোখে না দেখে জাতীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা আজকের সময়ের দাবি। আজকের প্রেক্ষাপটে ৭ই নভেম্বরের বার্তা
আজকের বাংলাদেশ যখন রাজনৈতিক বিভাজন, মতপার্থক্য ও সামাজিক বিভক্তির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে—তখন ৭ই নভেম্বরের “সংহতি” চেতনা আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক। এই দিন আমাদের শেখায়—
* জাতীয় স্বার্থই সর্বাগ্রে;
* স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্য অপরিহার্য;
* রাজনীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের মুক্তি ও কল্যাণ, কোনো ব্যক্তির ক্ষমতা নয়।
৭ই নভেম্বরের বিপ্লব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, একটি জাতির শক্তি তার ঐক্যে, তার সংহতিতে। ইতিহাসের এই দিনটি যদি আমরা শুধুমাত্র রাজনৈতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জাতীয় চেতনার অংশ হিসেবে গ্রহণ করি, তবে তবেই এর প্রকৃত মর্যাদা রক্ষা পাবে।
আজ প্রয়োজন সেই ঐক্যের আহ্বান—যে ঐক্য বাংলাদেশের জন্ম দিয়েছিল, এবং যে ঐক্য ৭ই নভেম্বরের বিপ্লবকে অমর করেছে।