শোয়েব হোসেন
০৯ নভেম্বর, ২০২৫, 2:38 AM
সনদ প্রদানে অনৈতিক অর্থ লেনদেনসহ ভয়াবহ কর্মকান্ডে জর্জরিত জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট
রাজধানীর শ্যামলীতে অবস্থিত "জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট" দেশের অন্যতম বিশেষায়িত মানসিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান। অথচ দীর্ঘদিন ধরে এখানে বিভিন্ন অনিয়ম, হয়রানি ও প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। রোগীরা বলছেন, এ যেন চিকিৎসার স্থানে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্র।
অনিয়ম এবং দুর্নীতির খবর সংগ্রহে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীরা যখন ইনস্টিটিউটে প্রবেশ করেন তখনই তারা বিভিন্ন অস্বাভাবিক আচরণ ও অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। বিষয়টি প্রেসক্লাব ও মানবাধিকার সংস্থায় আলোচনার পর নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও প্রামাণ্য তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
একজন উচ্চমান সহকারী যিনি বহুলভাবে পরহেজগার ও ধর্মপ্রাণ হিসেবে পরিচিত। অভিযোগ রয়েছে তিনি মানসিক অসুস্থতার সনদ প্রদানের ক্ষেত্রে গোপনে অর্থ গ্রহণ করেন। তার দাবি, লোকেরা জোর করেই তাকে টাকা দেয়। এক সাংবাদিক তার নিকটজন বলেও অহমিকা দেখান সেই উচ্চমান সহকারী।
এই ঘটনার পর প্রশ্ন উঠেছে — ধর্মীয় লেবাসের আড়ালে কতদিন ধরে চলছে এই অনৈতিক প্রক্রিয়া? ঘুষের এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে, কারা ভাগীদার— এসব জানতেও গভীর তদন্ত প্রয়োজন বলে অভিমত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
সনদ প্রদানের দায়িত্বে থাকা বোর্ডের এক সদস্য সাংবাদিকদের বলেছেন, “মানসিক রুগীরা প্রতিবন্ধী নয়” -এমন মন্তব্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। আরেক নারী সদস্যের মন্তব্য, “এখানে দুর্নীতি হতেই পারে”, জনমনে আরও প্রশ্ন তুলেছে।সেখানে রোগীদের প্রশ্ন করা হয়, “কেন সনদ নিতে এসেছেন?”— এমন প্রশ্নের জবাব তাদের মনোমতো না হলে সনদ না দিয়ে তাদের মুখের জোরে “সুস্থ” বলে ঘোষণা করে রুগীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে অনেকে মানসিক চিকিৎসার স্বীকৃতি ও সনদ না পেয়ে আরও মানসিক সংকটে পড়ছেন। অনেকে মন্তব্য করছেন, “মানসিক হাসপাতালটি যেন উল্টোভাবে মানুষকে আরও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলছে।”
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক বা বোর্ড সদস্যদের সঙ্গে সাংবাদিকরা যোগাযোগের চেষ্টা করলে বলা হয়— তারা খুব ব্যস্ত। এমনকি পরে শোনা যায়, তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বাধ্য নন। এমন মনোভাব একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর গুরুতর প্রশ্ন তোলে।
দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চিকিৎসা ও মানসিক সনদের জন্য আগত রোগীরা জানাচ্ছেন—হাসপাতালের অভ্যন্তরে পরিচ্ছন্নতার অবস্থা নাজুক, খাদ্য পরিবেশনে অনিয়ম, প্রয়োজনীয় ওষুধের ঘাটতি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেরিতে আসা বা অনুপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে রোগী ও স্বজনরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন। একজন রোগীর স্বজন বলেন, “ডাক্তারদের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটে, কিন্তু কেউ আসে না। আমাদের সঙ্গে কেউ কথা বলেও না।”
অভিযোগ রয়েছে, দেরিতে অফিসে আসা, দায়িত্বে গাফিলতি, রোগীদের প্রতি অমানবিক ব্যবহার ও অর্থ লেনদেনের মতো ঘটনা নিয়মিত ঘটলেও এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। ফলে রোগী, স্বজন, এমনকি সাধারণ মানুষ পর্যন্ত বিশ্বাস হারাতে শুরু করেছে।
জনমনে প্রশ্ন উঠেছে- ডিরেক্টর বোর্ডের আপত্তিকর প্রশ্ন ও হয়রানি রুখবে কে? যেখানে মানসিক সনদ একটি মৌলিক অধিকার, সেখানে কেন সেটি ব্যক্তিগত সন্তুষ্টির ওপর নির্ভর করবে? যারা দেরিতে অফিসে এসে রুগীদের কষ্ট দিচ্ছেন, তাদের জবাবদিহি কে নিশ্চিত করবে?
অনেকেই জানতে চান, “যদি মানসিক সনদ দেওয়ার নিয়মই এমন জটিল হয়, তবে কি এটি কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি হয়ে গেছে?” যারা সনদ প্রদান করেন তাদের নিজেদের মানসিক সুস্থতার যাচাই কি কখনো হয়?
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এমন সংবেদনশীল প্রতিষ্ঠানে সামান্য কিছু অনিয়মও ভয়াবহ সামাজিক প্রভাব ফেলতে পারে। অতএব, এখানে সংঘটিত এতোসব অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির অভিযোগগুলোর নিরপেক্ষ অনুসন্ধান ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
জনস্বার্থে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, দুদক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, সাংবাদিক সমাজ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আন্তরিক সহযোগিতা ও সজাগ দৃষ্টি কামনা করা হচ্ছে।