ঢাকা, লোড হচ্ছে...
সংবাদ শিরোনাম
দাম বাড়লো জ্বালানি তেলের, সোমবার থেকে কার্যকর পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জনমনে আস্থা ফেরাতে হবে উপজেলার সিএ পদে চাকরি করে তিন মাসেই কোটিপতি ঘাটাইলে বংশাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে যুবকের মৃত্যু গাজীপুরে নতুন পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় খালেদা জিয়া ভারতীয় আধিপত্যবাধের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক: রাশেদ খাঁন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আ. লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল ১২২ বার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য দায়ী পতিত স্বৈরাচার সরকার: আবু হানিফ

রাজধানীতে মনোনয়ন পেতে বিএনপির হাইভোল্টেজ প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ

#

মো: আল আমিন (বিশেষ প্রতিনিধি)

০৮ অক্টোবর, ২০২৫,  7:14 PM

news image

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনে জমে উঠেছে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের লড়াই। আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথম ভাগে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলার খবর এবং প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে বিএনপির ধারণা। এমন পরিস্থিতিতে রাজধানীর ২০টি আসনে প্রায় অর্ধশতাধিক (৫৩ জন) নেতা মাঠে নেমেছেন, 'ধানের শীষ' প্রতীক পেতে জোর লবিং ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন তারা।প্রতিদিনই বিভিন্ন সংসদীয় আসনে গণসংযোগ, সভা-সমাবেশের কর্মসূচি পালন করছেন দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

দলীয় সূত্র বলছে, এবারের নির্বাচনে প্রার্থীর 'আমলনামা' ও বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে অবদান কঠোরভাবে যাচাই করা হবে। এলাকার জনপ্রিয়তাকেও দেওয়া হবে বিশেষ গুরুত্ব। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী স্পষ্ট জানিয়েছেন, "রাজনীতিতে অবদান আছে, এলাকায় মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে—এমন প্রার্থীদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।"

গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে 'পারিবারিক' ও 'হেভিওয়েট' প্রার্থীর ছড়াছড়ি, ঢাকার বিভিন্ন আসনে বেশ কয়েকজন 'হেভিওয়েট' নেতার পাশাপাশি একই পরিবারের একাধিক সদস্যের মনোনয়ন চাওয়ার বিষয়টি এবার আলোচনার কেন্দ্রে।

ঢাকা-১: এ আসনটি দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে মাঠে রয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত আব্দুল মান্নানের মেয়ে ব্যারিস্টার মেহনাজ মান্নান।

ঢাকা-২: কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানা, সাভার উপজেলার আমিনবাজার, তেঁতুলঝোড়া ও ভাকুর্তা ইউনিয়ন, কেরানীগঞ্জ উপজেলার হযরতপুর, কলাতিয়া, তারানগর, শাক্তা, রোহিতপুর, বাস্তা, কালিন্দী এবং আগানগর ইউনিয়ন নিয়ে আসনটি গঠিত। এখানে বিএনপির মনোনয়ন চান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, তার ছেলে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইরফান ইবনে আমান এবং কেন্দ্রীয় যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রেজাউল করিম পল।

ঢাকা-৩: আসনটি কেরানীগঞ্জ উপজেলার জিনজিরা, আগানগর, তেঘরিয়া, কোন্ডা ও শুভাঢ্যা- এই ৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে ধানের শীষ চান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও তার পুত্রবধূ ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী।

ঢাকা-৪: আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭, ৫১, ৫২, ৫৩, ৫৪ নং ওয়ার্ড এবং শ্যামপুর থানা নিয়ে গঠিত। এ আসনে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন।

ঢাকা-৫: আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৮, ৪৯, ৫০, ৬০, ৬১, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৬৫, ৬৬, ৬৭, ৬৮, ৬৯ ও ৭০ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী ঢাকা মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী ও কেন্দ্রীয় বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা-৬: আসনটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩৪, ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১, ৪২, ৪৩, ৪৪, ৪৫ ও ৪৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে ধানের শীষ চান সাবেক মেয়র প্রার্থী ইশরাক হোসেন ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার।

ঢাকা-৭: বংশালের একাংশ, কোতোয়ালির একাংশ, চকবাজার, লালবাগ, হাজারীবাগ ও ধানমন্ডির একাংশ নিয়ে আসনটি গঠিত। এখানে দলীয় প্রার্থী হতে চান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান হামিদ, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, সাবেক এমপি প্রয়াত নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা ও যুবদলের কেন্দ্রীয় সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার।

ঢাকা-৮: মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন ও শাহজাহানপুর থানা নিয়ে আসনটি গঠিত। এই আসনে প্রার্থী হতে চান বিএনপির হেভিওয়েট নেতা দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল।

ঢাকা-৯: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ০১, ০২, ০৩, ০৪, ০৫, ০৬, ০৭, ৭১, ৭২, ৭৩, ৭৪ ও ৭৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। এখানে ধানের শীষ চান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, তার স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হাবিবুর রশীদ হাবীব।

ঢাকা-১০: আসনটি ঢাকা শহরের ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ ও ২২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাছির উদ্দীন আহমেদ অসীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল ইসলাম রবি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জুবাইদা রহমানের বোন বিন্দু নির্বাচন করতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা-১১: বাড্ডা, ভাটারা, রামপুরা ও হাতিরঝিল থানার একাংশ এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২১, ২২, ২৩,৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০, ৪১ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক এম এ কাইউম এবং তার স্ত্রী।

ঢাকা-১২: আসনটি ঢাকা শহরের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৫ ও ৩৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন চান কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও কেন্দ্রীয় সহ অর্থবিষয়ক সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করা মো. সাহাবুদ্দিন আহমেদ।

ঢাকা-১৩: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২. ৩৩ ও ৩৪ নং ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে ধানের শীষ চান বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আতাউর রহমান ঢালী ও সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

ঢাকা-১৪: আসনটি সাভার উপজেলার কাউন্দিয়া ইউনিয়ন এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ০৭, ০৮, ০৯, ১০, ১১ ও ১২ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে মনোনয়ন চান দারুস সালাম থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ সিদ্দিক সাজু, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মাহাদী আমিন ও যুবদলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জগলুল পাশা পাপেল।

ঢাকা-১৫: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ০৪, ১৩, ১৪ ও ১৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে ধানের শীষ চান যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মামুন হাসান ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম মিল্টন। বিপদের দিনে আন্দোলন সংগ্রামের ভূমিকা ও বহু মামলার আসামি হয়েছেন মামুন হাসান। তাই এই আসনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

ঢাকা-১৬: আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২, ৩, ৫ ও ৬ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এ আসনে ঢাকা উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে।

ঢাকা-১৭: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ড এবং ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে 'জিয়া পরিবার' থেকে কেউ প্রার্থী হবেন বলে শোনা যাচ্ছে। সেইসঙ্গে বিএনপি নেতা কামাল জামাল মোল্লা ও মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের নামও আলোচনায় রয়েছে।

ঢাকা-১৮: আসনটি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড নং ১, ১৭, ৪৩, ৪৪, ৪৫, ৪৬, ৪৭, ৪৮, ৪৯, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নিয়ে গঠিত। এ আসনে দলীয় প্রার্থী হতে চান ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, কফিলউদ্দিন আহমেদ ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান।

ঢাকা-১৯: সাভার উপজেলার শিমুলিয়া, ধামসোনা, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, বিরুলিয়া, বনগাঁও ইউনিয়ন এবং সাভার ইউনিয়ন ও সাভার পৌরসভা নিয়ে আসনটি গঠিত। এ আসনে ধানের শীষ চান ঢাকা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ এবং কফিল উদ্দিন।

ঢাকা-২০: আসনটি ধামরাই উপজেলা নিয়ে গঠিত। এ আসনে দৌড়ঝাঁপ করছেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, যুবদলের তমিজ উদ্দিন ও তরুণ নেতা ইয়াসিন ফেরদৌস মোরাদ।

প্রার্থীদের মূল্যায়নের মাপকাঠি নির্বাচনী প্রচারণার এই উত্তাল সময়ে বিএনপির নেতারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু জনপ্রিয়তাই নয়, বিগত দিনে দল ও আন্দোলনের প্রতি তাদের ত্যাগ এবার মনোনয়নের মূল নিয়ামক হবে। কেন্দ্রের চোখ এখন সব প্রার্থীর আমলনামার দিকে। ফলে, ঢাকা শহরের এই ২০টি আসনে চূড়ান্ত প্রার্থীর নাম ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক উত্তেজনা তুঙ্গে থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মূল্যায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা আরো বলেন,বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তাদের অবদান ছিল কি না, দলের পেছনে কতটা সময় দিয়েছেন- এ বিষয়গুলো বিবেচনায় যারা ফিট হবেন, তাদের প্রার্থী করা হবে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে অবদান আছে, এলাকায় মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক আছে- এমন প্রার্থীদেরকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।