রাহাত শরীফ (গোপালপুর)
০৪ অক্টোবর, ২০২৫, 2:40 PM
মুরগি প্রতারক চক্রের ফাঁদে গোপালপুরের বেশ কয়েকটি গ্রাম
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাত্র ৫০০ টাকায় সদস্য হলে হাইব্রিড জাতের ২০টি মুরগি, ২১ মাস পর্যন্ত ফ্রি খাদ্য, ঔষধ ও ভ্যাকসিন এবং ৬০০টি পর্যন্ত ডিম উৎপাদনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গোপালপুরের বিভিন্ন গ্রামে কোটি টাকার মতো অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এক প্রতারক চক্র।
তারা ১০ কিস্তিতে এক-একটি মুরগি পালনের দোতলা কাঠের ঘর ১০০ টাকায় প্রদানের ঘোষণাও করে। গ্রুপ লিডার হলে ১,৩০০ টাকা দিয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা বেতন, প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টা ডিম কমিশন এবং সাথে সঙ্গে ৫টি করে মুরগি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হত।
ভুক্তভোগীরা জানান, ‘লেয়ার মুরগি ফার্ম এন্ড হ্যাচারী’ নামে একটি কার্ডে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। কার্ডে প্রোপ্রাইটারের নাম দেয়া আছে মোছা. ফাতেমা তুজ-জান্নাত ও ঠিকানায় লেখা সাবগ্রাম, উপজেলা সদর, বগুড়া। প্রচারিত যে মোবাইল নম্বরগুলো—০১৭৬৮৮০৫২৯৭, ০১৭৭২৬৪৩৭১১ ও ০১৯৪৭১২৯৮১৫—বর্তমানে বন্ধ পাওয়া গেছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
রামজীবনপুর গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেছেন, আমার থেকেও ১ হাজার টাকা নিয়েছে। সেপ্টেম্বরের ১৫ তারিখে দুই জন এসে নগদ নিয়েছিল পরে বিকাশে ০১৭৭৩৯৩৭৩২৫ নম্বরে আরও কয়েকজনের ৪ হাজার টাকা নেয়। ২৫ তারিখে মুরগি আর খাদ্য ডেলিভারি দেওয়া কথা ছিল, কিন্তু এখন ফোন রিসিভ করছে না।
বাইশকাইল গ্রামের ভ্যানচালক মহির উদ্দিন বলেন, তারা বলেছিল ৩০ জনের গ্রুপ বানালে আমাকে মাসিক ৫ হাজার টাকা দেবেন, খাদ্যের ডিলার বানাবেন, আর প্রতিটি মুরগি থেকে ১০টি ডিম দেবে। পরে আমাদের গ্রামের ৩২ জনকে সদস্য বানানো হয়েছে। বিনিময়ে আমাকে মাত্র ৫টি মুরগি দিয়েছেন।”
পোড়াবাড়ী উত্তরপাড়া গ্রামের গৃহবধূ স্বপ্না বেগম জানান, দুই জন লোক এসে মিথ্যা লোভ দেখিয়ে ৩৬ জন মহিলার গ্রুপ করে ৫০০ টাকা নিয়েছিল এখন তারা পলাতক। আমরা চাই দেশের আর কেউ যেনো এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে না পরে—আমাদের টাকা ফেরত চাই এবং প্রতারকদের শাস্তি চাই।
গোপালপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম মুক্তার আশরাফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এখনো থানায় কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি। যদিও অভিযোগ পেলে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব; স্বপ্রণোদিতভাবে আমি চেষ্টা করব এই প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় আনার জন্য।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন যে গোপালপুর উপজেলার রামজীবনপুর, বাইশকাইল, পোড়াবাড়ী, উদ্যমপুর বর্ণী, নগদা শিমলা ও অন্যান্য গ্রাম থেকে হাজার—হাজার মানুষ তাদের মতো অর্থ দিয়েছিলেন। ভুক্তভোগীরা কক্সবাজারে নয়—বরং স্থানীয়ভাবে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হওয়া মানুষের তালিকা ও পরিচিতিগুলো সংরক্ষণ করে রাখছেন তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানাচ্ছেন কিছু পরিবার।
ভুক্তভোগীরা সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে প্রতারক চক্রটি শনাক্ত করে তাদের অর্থ ফেরত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন। একই সাথে তারা অনুরোধ করেন—গোপালপুর ও আশপাশের গ্রামে কেউ যাতে এই ধরনের মিথ্যা প্রলোভনে পড়ে না যায় সেজন্য সবাইকে সতর্ক করা হোক।