এ কে এম শামসুজ্জোহা চৌধুরী (কুড়িগ্রাম)
১৮ নভেম্বর, ২০২৫, 12:55 AM
কুড়িগ্রামের রাজারহাটে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের বিএনপিতে যোগদান
আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুড়িগ্রাম-২ আসনের রাজারহাট উপজেলা জাতীয় পার্টির প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগদান করেন।
রবিবার (১৬ই নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় রাজারহাট মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এক নির্বাচনী মতবিনিময় সভায় তারা বিএনপিতে যোগদান করেন।
যোগদানকারী নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তার আদর্শ ধারণ করে বিএনপির রাজনীতি করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সেই সাথে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে 'ধানের শীষ' প্রতীকের পক্ষে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
যোগদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির আহবায়ক জনাব মোস্তাফিজুর রহমান (মোস্তফা)। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন- জনাব আলহাজ্ব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ, সদস্য সচিব কুড়িগ্রাম-২ আসনের বিএনপি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী।
সভায় বিশেষ অতিথি জনাব শফিকুল ইসলাম (বেবু), যুগ্ম আহবায়ক জেলা বিএনপি কুড়িগ্রাম। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাহমুদুল হাসান আল মারজান, যুগ্ন আহবায়ক বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদ।
যোগদান অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, আহবায়ক(ভারপ্রাপ্ত) উপজেলা বিএনপি রাজারহাট। সভা সঞ্চালনা করেন মোঃ সাইদুল ইসলাম, সদস্য সচিব, উপজেলা বিএনপি রাজারহাট।
যোগদানকারী জাপা নেতাকর্মীরা সাংবাদিকদের জানান, কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় পার্টির স্বার্থবাদী এক নেতার কারণেই তারা দীর্ঘদিন থেকে দলে উপেক্ষিত হচ্ছেন এবং তাদের সঠিক মূল্যায়ন হচ্ছিল না তাই তারা দলত্যাগের এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেই সাথে তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চলমান আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকার লক্ষ্যেই এই দলে যোগদান করেন।
এছাড়াও আসন্ন ত্রয়োদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলে কুড়িগ্রাম-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত করতে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তারা।
এ সময় প্রধান বক্তা আলহাজ্ব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদ যোগদানকৃত নেতাকর্মীদের স্বাগত জানান এবং তাদের এই যোগদানকে আগামী নির্বাচনে বিজয়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি সকলের প্রতি ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।
এদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর বিএনপিতে যোগদানে তৃণমূল জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় পার্টির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ২৪ শের জুলাই-আগস্টের গন-অভ্যুত্থানের পর থেকে কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় পার্টির কোন রকম সাংগঠনিক তৎপরতা দেখা যায়নি। এমনকি আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখনো নীরব ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে।তবে জেলার উলিপুর উপজেলার জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব ও উলিপুর-৩ আসনের জাতীয় পার্টি মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী আব্দুস সোবহানের নির্বাচনী তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও অন্যান্য তিন আসনে জাতীয় পার্টির তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। জাতীয় পার্টির এই লাজুক অবস্থার জন্য তৃণমূল জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দ সরাসরি আঙ্গুল তুলছেন কুড়িগ্রাম জেলা জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের দিকে।
স্থানীয় সুত্র থেকে জানা যায়, বিএনপিতে নব্য যোগদানকৃত জাতীয় পার্টি নেতৃবৃন্দ উপজেলাতে তারা জাতীয় পার্টির খুটি হিসাবে পরিচিত ছিলো। শুধুমাত্র ব্যক্তি প্রভাব জিইয়ে রাখতে সাংগঠনিকভাবে পদ বঞ্চিত হওয়ায় তারা দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয় বলে একাধিক সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
যোগদানকৃতরা হলেন- রাজারহাট উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি ও নাজিম খান, ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি জামাল উদ্দিন (সাবেক চেয়ারম্যান) উমরমজিদ ইউনিয়ন জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি আব্দুল হাকিম (সাবেক চেয়ারম্যান), সোহেল রানা বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন জাতীয় পার্টি, শহিদুজ্জামান আঙ্গুর সাবেক, সভাপতি উপজেলা ছাত্রসমাজ ও যুবসমাজ, সাবেক জাপা নেতা পেয়ারুল ইসলাম মাস্টারসহ প্রায় অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী।
উল্লেখ্য, রাজারহাটের এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা জাকারিয়া খান বিটন দীর্ঘদিন বিএনপির রাজনীতির বাইরে থাকলেও জাতীয় পার্টির নেতৃবৃন্দের সাথে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সোহেল হোসাইন কায়কোবাদের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন।