ঢাকা, লোড হচ্ছে...
সংবাদ শিরোনাম
দাম বাড়লো জ্বালানি তেলের, সোমবার থেকে কার্যকর পেশাদারিত্ব বজায় রেখে জনমনে আস্থা ফেরাতে হবে উপজেলার সিএ পদে চাকরি করে তিন মাসেই কোটিপতি ঘাটাইলে বংশাই নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে পানিতে ডুবে যুবকের মৃত্যু গাজীপুরে নতুন পুলিশ সুপার শরিফ উদ্দিন কুড়িগ্রামে পুলিশ সুপারের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময় খালেদা জিয়া ভারতীয় আধিপত্যবাধের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীক: রাশেদ খাঁন বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আ. লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেছাল ১২২ বার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার জন্য দায়ী পতিত স্বৈরাচার সরকার: আবু হানিফ

এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়নি হাতিয়া গণহত্যা দিবস

#

এ কে এম শামসুজ্জোহা চৌধুরী (কুড়িগ্রাম)

১৪ নভেম্বর, ২০২৫,  10:03 AM

news image

স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও কুড়িগ্রাম জেলার উলিপুর উপজেলার মানুষ আজও বেদনাভরা হৃদয়ে স্মরণ করে ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বরের ভয়াবহ সেই দিনটিকে — “হাতিয়া গণহত্যা দিবস”।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই হত্যাযজ্ঞের ঘটনাটি স্থানীয়ভাবে প্রতি বছর পালন করা হলেও এখনো তা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পায়নি।

রক্তে রাঙানো ভোর- ১৯৭১ সালের ১৩ নভেম্বর, শনিবার। রমজান মাসের ২৩ তারিখ। ভোররাতে যখন গ্রামের মানুষ কেউ সেহরি খেয়ে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, কেউ বা ফজরের নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন— তখনই নেমে আসে বিভীষিকার সেই কালরাত্রি। আগের দিন কুড়িগ্রাম থেকে ট্রেনে করে প্রায় পাঁচ শতাধিক পাকিস্তানি সেনা উলিপুরের পথে রওনা দেয়। পথিমধ্যে তারা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে হাতিয়া ইউনিয়নের দিকে এগিয়ে আসে।

এরপর শুরু হয় অবিরাম মর্টার হামলা ও গুলিবর্ষণ। মুহূর্তেই কেঁপে ওঠে দাগারকুটি, বাগুয়া অনন্তপুর, হাতিয়া বকশী, রামখানা, নয়াদাড়া, নীলকণ্ঠ, যমুনা ও মন্ডলেরহাটের জনপদ। পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আল-শামস সদস্যরা নির্বিচারে হত্যা শুরু করে নিরীহ মানুষদের ওপর।

নৃশংসতার সীমা ছাড়ানো হত্যাযজ্ঞ- প্রাণ বাঁচাতে অনেকেই ধানক্ষেত বা নদীর পাড়ে আশ্রয় নেন। কেউ কেউ ব্রহ্মপুত্রের জলে ঝাঁপ দেন মুক্তির আশায়, কিন্তু অধিকাংশই ফেরেননি। অসহায় গ্রামবাসীর আর্তচিৎকারে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। দাগারকুটি গ্রামে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয় ৬৯৭ জন মানুষকে। এমনকি মায়ের কোলের শিশুটিও রক্ষা পায়নি। সেদিনের আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় শতশত ঘরবাড়ি, ধ্বংস হয় গৃহস্থালির স্বপ্ন। পুরো হাতিয়া অঞ্চল পরিণত হয় মৃত্যুপল্লীতে।

ভাঙনের সঙ্গে ভেসে গেছে স্মৃতিও- স্বাধীনতার পর স্থানীয়ভাবে শহিদদের স্মরণে দাগারকুটি গ্রামে নির্মিত হয় একটি স্মৃতিসৌধ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সেই গ্রামটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরে অনন্তপুর বাজারের পশ্চিম পাশে নতুন করে স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়, যেখানে প্রতি বছর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মিলাদ, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

জাতীয় স্বীকৃতির প্রত্যাশা- হাতিয়া গণহত্যার স্বজনদের কাছে এ দিবস কেবল শোকের নয়, বরং এক অবহেলিত ইতিহাসের সাক্ষ্য। তারা আজও আশা করেন— একদিন হয়তো সরকার এই দিনটিকে “জাতীয় হাতিয়া গণহত্যা দিবস” হিসেবে স্বীকৃতি দেবে, যাতে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে স্বাধীনতার জন্য এই অঞ্চলের মানুষ কী ভয়াবহ মূল্য দিয়েছে। স্বীকৃতি শুধু একটি দিবসের নয়— এটি হবে ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক, শহিদদের প্রতি জাতির সম্মিলিত শ্রদ্ধা।